নামাজ আদায় করার সঠিক নিয়ম
যে জায়গায় নামাজ পড়তে দাঁড়ানো হবে, সেখানে অবশ্যই কেবলা মুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে এবং মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করবে না, কারণ মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করা শরীয়ত সম্মত নয়; বরং বা তা বিদ’আত।
কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাগণ কেউ মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করেননি।
সুন্নত হলো যে, নামাযী তিনি ইমাম হয়ে নামায আদায় করুন অথবা একা তার সামনে সুত্রাহ (নামাযের সময় সামনে স্থাপিত সীমাচিহ্ন) রেখে নামায পড়বেন। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলইহি ওয়াসাল্লাম
নামাযের সামনে সুত্রাহ ব্যবহার করে নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিবলামুখী হওয়া নামাযের শর্ত।
আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে নামাযে দাঁড়াবে এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানে নিবদ্ধ রাখবে।
পুরুষ এর ক্ষেত্রেঃ তাকবীরে তাহরীমার সময় উভয় হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠানো এবং উভয় তালু কিবলামুখি হওয়া।
মহিলার ক্ষেত্রেঃ তাকবীরে তাহরীমার সময় উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠানো।
পুরুষ এর ক্ষেত্রেঃ উভয় হাত নাভীর ঠিক নিচে রেখে ডান হাতের বৃদ্ধা এবং কনিষ্ঠংগুলি দ্বারা বাম হাতের কব্জি
ধরে ডান হাতের মধ্যের তিন আঙ্গুল বাম হাতের পিঠের উপর থাকবে।
মহিলার ক্ষেত্রেঃ মেয়ে লোকগন বুকের উপর বামহাত রেখে হালকাভাবে ডান হাত দ্বারা ধরবে।
হাত বাঁধার পর সানা পড়তে হয় । সানা পড়া সুন্নাত।
( سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ )
উচ্চারণঃ(সোবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাস্মুকা, ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।)
সানা পড়ার পর আউজুবিল্লাহ পড়া সুন্নাত, বিসমিল্লাহ্ পড়া সুন্নাত, এর পর সূরা ফাতিহা পড়া। সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব।
সূরা ফাতিহার শেষে আমীন বলা।
সূরা ফাতিহা পড়া শেষে সূরা মিলানোর পুর্বে বিসমিল্লাহ্ পড়া সুন্নাত। সূরা মিলানো ওয়াজিব।
উভয় হাত দু’কাঁধ অথবা কান বরাবর উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে রুকূতে যাবে। মাথাকে পিঠ বরাবর রাখবে এবং উভয় হাতের আঙ্গুলগুলিকে খোলাবস্থায় উভয় হাঁটুর উপরে রাখবে।
রুকূতে ইতমিনান বা স্থিরতা অবলম্বন করবে। এবং চোখের দৃষ্টি দুই পায়ের মধ্যভাগে রাখা।
এরপর বলবেঃ ((সুবহানা রাব্বি’আল ‘আজীম))।
অর্থঃ ((আমি আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।))
দোয়াটি তিন বা তার অধিক পড়া ভাল
রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়ানো ওয়াজিব। দাড়ানোর সময় "সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ" বলা এবং তারপর "রাব্বানা লাকাল হামদ" বলা সুন্নাত।
সিজদাতে যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবর বলা সুন্নাত । তারপর দুই সিজদাহ করা ফরজ।
বলে যদি কোন প্রকার কষ্ট না হয় তা হলে দুই হাটু উভয় হাতের আগে (মাটিতে রেখে) সিজদায় যাবে। আর কষ্ট হলে উভয় হাত হাটুর পূর্বে (মাটিতে) রাখা যাবে।
হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলি কিবলামুখী থাকবে এবং হাতের আঙ্গুলগুলি মিলিত ও প্রসারিত হয়ে থাকবে।সেজদাহ অবস্থায় চোখের দৃষ্টি নাকের দিকে নিবন্ধ রাখা এবং
হাতের আঙ্গুলগুলি মিশিয়ে রাখা । সিজদাহ্ হবে সাতটি অঙ্গের উপর। অঙ্গগুলো হলোঃ নাক সহ কপাল, উভয় হাতুলী, উভয় হাঁটু এবং উভয় পায়ের আঙ্গুলের ভিতরের অংশ।
((সেজদাহ মেয়েলোকগন শরীর একেবারে মিশিয়ে সেজদাহ করবে।))
সিজদায় গিয়ে বলবেঃ ((সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা)) । এই দোয়াটি তিনবার বলা সুন্নত।
সেজদাহ হতে উঠার সময় সর্বপ্রথম কপাল তারপর নাক তারপর হাত উঠবে। (আল্লাহু আকবার)) বলে সিজদাহ থেকে মাথা উঠাবে। বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসবে এবং ডান পা খাড়া করে রাখবে। দু’হাত তার উভয় রান (উরু) ও হাঁটুর উপর রাখবে।
((আল্লাহু আকবার)) বলে দ্বিতীয় সিজদাহ করবে। এবং দ্বিতীয় সিজদায় তাই করবে প্রথম সিজদায় যা করেছিল।
(( সেজদাহ শেষ করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আবার প্রথম রাকাতের মত ২য় রাকাতের সিজদাহ পর্যন্ত হুবুহু পড়বে। ))
২য় রাকাতের সিজদাহ থেকে ((আল্লাহু আকবার)) বলে মাথা উঠাবে। ক্ষণিকের জন্য বসবে, যে ভাবে উভয় সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে বসেছিল।
এ ধরনের পদ্ধতিতে বসাকে ((জলসায়ে ইসতেরাহা)) বা আরামের বৈঠক বলা হয়।
এরপর আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করা ওয়াজিব। যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হয় তবে আত্তাহিয়্যাতুর পর দুরুদ শরীফ পাঠ করা এবং তারপর দোয়ায়ে মাসুরা পড়া সুন্নত।
বসা অবস্থায় চোখের দৃষ্টি হাতের উপর রাখা এবং আঙ্গুলগুলি স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা ও বাম পায়ের উপর বসে ডান পা খাড়া রেখে আঙ্গুলগুলী ভাজ করে কিবলামুখী করে রাখা ।
[[মেয়েলোকগনের ক্ষেত্রে , বসা অবস্থায় নিতম্বের উপর বসবে এবং উভয় পা ডান দিকে বের করে দিবে ]]
তিন বা চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হলে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করার পর দাঁড়িয়ে বাকি রাকাতগুলি আদায় করবে। "আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহু" বয়লে প্রথমে ডান দিকে পরে বাম দিকে সালাম ফিরাবে। সালাম ফিরানো ওয়াজিব
তারপর দুরুদ শরীফ ও ইস্তেগফার পাঠ করে মুনাজাত করবে , মুনাজাত করা নামাযের অংশ নয়।
ক. ওয়াজিব বা সুন্নত নামাজে শেষের দুই রাকাতে সূরাহ ফাতিহার পর আরেকটি সূরাহ পড়তে হবে।
খ. জামাতের নামাজে মুক্তাদিগণের কোন সূরাহ পড়তে হবেনা, ঈমাম পড়বেন। কিন্তু বাকি সব তাসবীহ পড়তে হবে।
গ. যোহর এবং আসরের ফরজ নামাজের সূরাহ গুলি নিঃশব্দে পড়তে হবে কিন্তু মাগরীব, এশা, ফজরের ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতের সূরাহগুলো উচ্চস্বরে পড়তে হবে।
ঘ. জুম'আ এবং ঈদের নামাজের সূরাহগুলো উচ্চস্বরে পড়তে হবে।
Devoloped by: মোঃ আল আমিন