কাজা নামাজের বিবরন
নামাজ একটি অবশ্য পালনীয় বিধান। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ, সবল বিবেকবান মুসলমান নর-নারীর ওপর প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। ইচ্ছাকৃত নামাজ ছেড়ে দেয়া কবিরা গুনাহ। পরে তার কাজা আদায় করা ওয়াজিব। ওয়াক্ত মতো নামাজ না পড়লে পরে নামাজ কাজা পড়তে হয়। নামাজ কাজা ইচ্ছাকৃতও হতে পারে। অনিচ্ছাকৃতও হতে পারে। আবার শয়তান ও নফসের
কুমন্ত্রণায়ও নামাজ কাজা হতে পারে। কেউ যদি তওবাও করে তাহলেও কাজা নামাজ আদায় করার হুকুম বিলুপ্ত হয় না, এমনকি হজ করার মাধ্যমেও মাফ হয় না। কেউ যদি কাজা নামাজ আদায় না করে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং এ রোগে মারা যায় আর অসুস্থাবস্থায় লোকটি ওয়ারিশদের তার পক্ষ থেকে কাজা নামাজের ফেদিয়া দেয়ার কথা বলে যায়Ñ এ অবস্থায় তার ওয়ারিশদের ওপর ফেদিয়া দেয়া ওয়াজিব। এমন অনেক লোক রয়েছে, যাদের জিম্মায় অনেক কাজা নামাজ রয়েছে। আর কাজা নামাজ আদায় করার সময় এ নিয়ত করতে হবে, আমি অমুক দিনের জোহরের নামাজ কাজা আদায় করছি।
যদি দিন-তারিখ মনে না থাকে, এমতাবস্থায় এভাবে নিয়ত করবে আমি আমার জীবনের সর্বপ্রথম জোহর নামাজের কাজা আদায়
করছি। এভাবে প্রত্যেক কাজা নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে নিয়ত করবে। এভাবে ততদিন পর্যন্ত কাজা নামাজ আদায় করতে থাকবে, যতক্ষণ না ব্যক্তির মন এ সাক্ষ্য দেবে, তার জিম্মায় কোনও নামাজ কাজা নেই।
উচ্চারন : নাওয়াইতু আন আক্কাদিয়া লিল্লাহি তাআ'লা রাকআতাই সালাতিল ফাজরিল ফারিয়াতি
ফারদুল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবর।
বাংলা উচ্চারণঃ আমি আল্লাহর জন্য ক্বেবলামুখী হইয়া ফজরের দুই রাকাআত ফরজ নামাজের কাজা আদায় করিতেছি, আল্লাহু আকবর।
[[ অন্যান্য ওয়াক্তের নামাজের ক্ষেত্রে কাজা নামাজে "উছাল্লিয়া" স্থানে "আক্বদিয়া" পড়িবে এবং ওয়াক্তের নামাজের পর "ফায়িতাতি" বলিবে।
১. যদি কোনো এক ওয়াক্তের নামাজ কাজা হয়, তবে পরবর্তী ওয়াক্তের
নামাজের আগেই কাজা পড়ে নিতে হবে। যেমন- যদি কারো এশার নামাজ অথবা
বিতির নামাজ কাজা হয়, তবে ফজরের নামাজের আগেই কাজা আদায় করে নিতে
হবে। এশা বা বিতিরের নামাজ কাজা না পড়ে ফজর পড়লে ফরজ নামাজ হবে
না।
এরকম অবস্থায় এশা ও বিতিরের নামাজের কাজা আদায় করে নিয়ে পুনরায়
ফজর নামাজ পড়তে হবে। এরকম যদি জোহর কাজা হয়, তবে আসর নামাজের
আগে, আসর কাজা হলে মাগরিবের নামাজের আগে এবং মাগরিব কাজা হলে
এশার নামাজের আগে পড়ে নিতে হবে।
২. কাজা না পড়েও ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়লে নামাজ হয়ে যায় এরকম
অবস্থা ৩টি যেমন:
(১) কাজা নামাজ আদায় করতে গিয়ে যদি ওয়াক্তিয়া নামাজও
কাজা হবার সম্ভাবনা থাকে
(২) কাজা নামাজের কথা মনে না থাকলে
(৩) পাঁচ
ওয়াক্তের বেশী নামাজ কাজা হয়ে গেলে।
৩. ফজরের নামাজ পড়বার সময় কোনো ব্যক্তি যদি দেখে তার এশার
নামাজ ও বিতির কাজা আছে। অথচ এশা ও বিতির কাজা পড়ে নিয়ে ফজর
পড়তে গেলে ফজর নামাজের সময় চলে যায়, তখন সে ফজরের নামাজ পড়ে
নিলে নামাজ হয়ে যাবে।
৪. জোহরের নামাজ পড়তে পড়তে অথবা নামাজ পড়া শেষে যদি কারো
হঠাৎ মনে পড়ে তার ফজরের নামাজ কাজা ছিলো। এমতাবস্থায় তার জোহরের
নামাজ হয়ে যাবে। পরে শুধু ফজরের কাজা পড়তে হবে।
৫. যদি কারো পাঁচ ওয়াক্তের বেশী নামাজ কাজা হয়ে যায় তখন কাজা
নামাজ আদায় না করেও যদি কেউ ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়তে থাকে, তবে তার
নামাজ হয়ে যাবে। তবে কাজা নামাজ এভাবে ফেলে না রেখে যত তাড়াতাড়ি
পারা যায়, আদায় করে নিতে হবে।
৬. কাজা হওয়া নামাজের শুধু ফরজ এবং বিতিরের কাজা পড়তে হয়। সুন্নত
নামাজের কাজা পড়তে হয় না। শুধু ফজরের নামাজের কাজা দুপুরের আগে
পড়লে সুুন্নতেরও কাজা আদায় করে নেয়া উচিত। যদি জোহরের ওয়াক্ত এসে
যায়, তবে শুধু ফরজের কাজা পড়ে নিবে।
৭. যদি কেউ জুমআর নামাজ না পায়, তবে তাকে জোহর পড়ে নিতে হবে।
যদি ঈদের নামাজ না পায়, তবে কাজা পড়তে হবে না।
৮. জোহরের ফরজের জামাতে শামিল হওয়ার জন্য যদি কেউ চার রাকাত
সুন্নত নামাজ পড়ার সময় না পায়, তবে জামাত শেষে দুই রাকাত সুুন্নতের পর
বাদ পড়ে যাওয়া চার রাকাত সুন্নত পড়ে নিতে পারবে।
৯. যদি ফজরের জামাতে শামিল হতে গিয়ে কারো ফজরের দুই রাকাত
সুন্নত বাদ পড়ে যায়, তবে বেলা ওঠার পরে বাদ পড়ে যাওয়া সুন্নত পড়ে নিতে
পারবে।
১০. নফল নামাজ শুরু করার পর যদি কেউ নামাজ ছেড়ে দেয়, তবে এই
নামাজের কাজা পড়তে হবে। কারণ নিয়ত করে নফল শুরু করলে তা আদায় করা
ওয়াজিব হয়ে যায়। আর ওয়াজিব নামাজের কাজাতো আদায় করতেই হবে।
১১. দশ বিশ বৎসর বা আরো বেশী সময় ধরে কেউ বেনামাজী থাকার পর
যদি খাঁটি অন্তঃকরণে তওবা করে, তবে পারলে তার পিছনের সকল কাজা নামাজ
আদায় করে নেয়া উচিত। অন্ততপক্ষে এতটুকু করা উচিত যে, তওবার পরে যেনো
কোনো অবস্থাতেই নামাজ কাজা না হয়। ভুলক্রমে যদি হঠাৎ কখনো নামাজ কাজা
হয়ে যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গে কাজা আদায় করে নিবে। অতীতের নাফরমানীর জন্য
লজ্জিত ও অনুতপ্ত থাকবে এবং আল্লাহ্পাকের দয়া ও ক্ষমার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস
রাখবে। খাঁটি তওবার চিহ্ন এই যে, শুধু নামাজে নয়, সর্ব অবস্থায় তওবাকারীর
আমল শরীয়তের সাজে পুরোপুরি সজ্জিত থাকবে এবং আল্লাহ্পাকের দয়া ও
ক্ষমার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে। প্রকৃতপক্ষে খাঁটি তওবা আল্লাহ্পাকের সর্বশ্রেষ্ঠ
নেয়ামত।
আল্লাহ্পাক খাঁটি তওবাকারীদের অতীতের সকল গোনাহ্ পুণ্যে রূপান্তরিত
করে দেন। নবী ও রসুলগণের জামানায় তাদের কাছে গিয়ে বায়াতের মাধ্যমে
তওবা করার নিয়ম। যেহেতু আমাদের দয়াল নবী মোহাম্মদুর রছুলুল্লাহ্ স. এর
মহাতিরোধানের পর আর কোনো নবী আসবেন না, তাই তাঁর খাঁটি কোনো
নায়েব, কোনো কামেলে মোকাম্মেল পীর মোর্শেদের কাছে বায়াতের মাধ্যমে
তওবা করা একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহ্পাক যদি এরকম কোনো খাঁটি মোর্শেদের
নিকট তওবা নসিব করেন, তবে আল্লাহ্পাকের কালাম অনুযায়ী তার অতীতের
গোনাহ্সমূহও নেকি হয়ে যাবে। আল্লাহ্পাকের এরশাদ এরকম ‘কিন্তু যারা
তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ্ তাদের গোনাহ্কে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দিবেন।’ (সূরা আল ফুরকান)।
Devoloped by: মোঃ আল আমিন